• রবিবার, ৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪২৯

শিক্ষা

“শিক্ষিকা থাকেন ঢাকায়, হাজিরা খাতায় উপস্থিত বিদ্যালয়ে” শিরোনামে বাংলাদেশের খবরে সংবাদ প্রকাশ

সেই ঘটনায় দু’ শিক্ষিকা সাময়িক বরখাস্ত, জড়িত এ.ইউ.ই.ও ও প্রধান শিক্ষককের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে প্রতিবেদন প্রেরণ

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ০৬ জুলাই ২০২৩

আবু হাসান কেষ, কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী) প্রতিনিধি:
“শিক্ষিকা থাকেন ঢাকায়, হাজিরা খাতায় উপস্থিত বিদ্যালয়ে” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তে প্রমানিত হওয়ায় দু’ জন সহকারি শিক্ষিকাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনার সাথে জড়িত সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শাখাওয়াৎ হোসেন ও প্রধান শিক্ষক মোঃ আশরাফুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদন উর্দ্ধতন কতৃর্পক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ নবেজ উদ্দিন সরকার।
“শিক্ষিকা থাকেন ঢাকায়, হাজিরা খাতায় উপস্থিত বিদ্যালয়ে” শিরোনামে গত ৭ জুন বাংলাদেশের খবর পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত সম্পন্ন করে গত ১৯ জুন তদন্ত প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর—ই—আলম সিদ্দিকীর হাতে জমা দেন। ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদনটি উর্দ্ধতন কতৃর্পক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর—ই—আলম সিদ্দিকী এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে উপজেলা শিক্ষা অফিসের তরফ হতেও ঘটনাটি তদন্ত করা হয়। উপজেলা শিক্ষা অফিসার নূর মোহাম্মদসহ অপর তিন জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার এ তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। তদন্ত শেষে উপজেলা শিক্ষা অফিসার নূর মোহাম্মদসহ তদন্তকারী অপর তিন জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের স্বাক্ষরিত এ তদন্ত প্রতিবেদনটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
এরই ফলশ্রম্নতিতে গত ২৬ জুনের ১৪৮২ নম্বর স্মারকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ নবেজ উদ্দিন সরকারের স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে ঢাকায় অবস্থান করেও হাজিরা খাতায় উপস্থিত থাকা পুটিমারী ঝাকুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সেই সহকারি শিক্ষিকা শামীমা নওরীন জ্যোতিকে সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপীল) বিধিমালা—২০১৮ এর ৩(খ) ও (ঘ) ধারা অনুযায়ী জালিয়াতি, অসদাচরণ ও দুনীর্তির দায়ে অভিযুক্ত করে একই বিধির ১২(১) ধারা মোতাবেক চাকুরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এছাড়া ওই শিক্ষিকা ঢাকায় থাকলেও একই বিদ্যালয়ের অপর এক সহকারি শিক্ষিকা বেগম শামসুন্নাহার জাল স্বাক্ষর দিয়ে শামীমা নওরীন জ্যোতিকে বিদ্যালয়ে উপস্থিত দেখিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তা তদন্তে প্রমানিত হওয়ায় জাল স্বাক্ষর দেয়া সহকারি শিক্ষিকা বেগম শামসুন্নাহারকেও একই ধারা মোতাবেক চাকুরী হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে ২৬ জুনের ১৪৮২ নম্বর স্মারকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ নবেজ উদ্দিন সরকারের স্বাক্ষরিত অপর একটি অফিস আদেশে। সহকারি শিক্ষিকা বেগম শামসুন্নাহার ঢাকায় অবস্থান করা সহকারি শিক্ষিকা শামীমা নওরিন জ্যোতির চাচি বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে একটি সূত্র জানায়— তদন্তের সময় কেঁাচো খুঁড়তে গিয়ে বেড়িয়েছে সাপ। ওই বিদ্যালয়ে গত ৩ মার্চ পরিদর্শনে গিয়ে কোন শিক্ষককে বিদ্যালয়ে উপস্থিত পাননি সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাখাওয়াৎ হোসেন। তিনি আবার ২৩ মার্চ ওই বিদ্যালয়ে সকালে পরিদর্শনে যান। বিদ্যালয়ে কোন শিক্ষককে পাননি। পরবতীর্তে একই দিন এ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবারও ওই বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে যান। এসময় তিনি সকলকে উপস্থিত পান বলে একটি শোকজ পত্রে উল্লেখ করেছেন। দেরিতে বিদ্যালয়ে আসার কারণে শিক্ষকগণদের ২৭ মার্চ একটি পত্রের মাধ্যমে শোকজ করেন এবং তিন কার্য দিবসের মধ্যে যথাযথ কারণসহ ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দেন। কিন্তু এ বিদ্যালয়ে কর্মরত ৬ জন শিক্ষক থাকলেও ওই শোকজ পত্রে ৫ জন শিক্ষককে শোকজ করা হয়। দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকা শামীমা নওরিন জ্যোতিকে রাখা হয় আরালে। এমনকি তাকে কোন রকম শোকজ করা হয়নি। এছাড়া তাকে বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবেও ওই চিঠিতে দেখানো হয়নি। আবার প্রতি মাসে বেতন দাখিলের সময় যে রিটার্ন দাখিল করতে হয়। সেই রির্টানে ঠিকই শামীমা নওরিন জ্যোতিকে শিক্ষিকা হিসেবে দেখান এ সহকারি শিক্ষা অফিসার শাখাওয়াৎ হোসেন। বেতন রির্টানে শামীমা নওরিন জ্যোতির স্বাক্ষরের ঘরগুলো ফাঁকা থাকলেও বেতনের সুপারিশ করেন এ সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার।
সম্প্রতি উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভায় এ ঘটনায় তোলপাড় হয়েছে। ওই শিক্ষিকার স্বাক্ষরের ঘরগুলো ফাঁকা থাকলেও বেতন বন্ধের সুপারিশ না করে বেতনের সুপারিশ করা কেন হয়েছে এ প্রশ্ন সম্প্রতি উপজেলা শিক্ষা কমিটিতে উথ্থাপিত হলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার নূর মোহাম্মদ সভায় জানান— যে শিক্ষিকা অনুপস্থিত, ওই শিক্ষিকাকে বাদ দিয়ে যারা দেরি করে বিদ্যালয়ে এসেছে তাদের শোকজ করেছেন তিনি। কিন্তু অনুপস্থিত শিক্ষক শামীমা নওরিন জ্যোতিকে শোকজ করেনি এবং স্বাক্ষরের ঘর ফাঁকা থাকা সত্তেও বেতনের সুপারিশ করেছে সহকারী উপজেলা শিখ্ষা অফিসার সাখাওয়াৎ হোসেন। উপজেলা শিক্ষা অফিসার আরও জানান— ওই শিক্ষিকাকে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাখাওয়াৎ হোসেন কেন রক্ষা করতে চাচ্ছে এবং তার কি স্বার্থ রয়েছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি। আমরা সবকিছু প্রতিবেদন আকারে উর্দ্ধতন কতৃর্পক্ষকে দাখিল করবো।
অপর একটি সূত্র জানায়— সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াৎ হোসেন ওই ঘটনার সাথে জড়িত থেকেও তিনি নিজেই উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে কোন কিছু না জানিয়েই উর্দ্ধতন কতৃর্পক্ষের কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছিল। যা উর্দ্ধতন কতৃর্পক্ষ গ্রহণ করেনি বলে সুত্রটি দাবী করেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার নূর মোহাম্মদ পুটিমারী ঝাকুয়াপাড়া সরকারি প্রাপথমিক বিদ্যারয়ের দু’ জন সহকারি শিক্ষিকাকে সাময়িকভাবে বরখাস্তের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি অফিস আদেশ দু’টি পেয়েছেন বলেও জানান। তিনি আরও বলেন— আমরা সবকিছু বিষয়ে তদন্ত করে উর্দ্ধতন কতৃর্পক্ষকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর—ই—আলম সিদ্দিকী জানান— উপজেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্দ্ধতন কতৃর্পক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ নবেজ উদ্দিন সরকার জানান— তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে দু’ জন সহকারি শিক্ষিকাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আমার কোন ক্ষমতা নেই। তাই এ ঘটনার সাথে জড়িত সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শাখাওয়াৎ হোসেন ও প্রধান শিক্ষক মোঃ আশরাফুল ইসালামের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত প্রতিবেদন উর্দ্ধতন কতৃর্পক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads